December 23, 2024, 9:12 am
ডেস্ক নিউজ ॥
দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে বরাবরই উজ্জ্বল মুশফিকুর রহীমের ব্যাট। মর্যাদাপূর্ণ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে তার ব্যাটিং গড় ৫৭.৫০, মোহামেডানের হয়ে ৪৫, শেখ জামালের হয়ে আরও বেশি, ৬৯.৩৩! কিন্তু শিরোপা কখনও জেতা হয়নি মুশফিকের।
ডিপিএলের এবারের আসর মুশফিক নাম লিখিয়ছেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেডে। আশা করছেন দীর্ঘদিনের শিরোপাখরা কাটবে এ মৌসুমেই। আর সে লক্ষ্যে সবার আগে দরকার মুশফিকুর রহীমের চওড়া ব্যাটের নৈপুণ্য। যা তিনি করে দেখালেন টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচেই, হাঁকালেন নতুন ক্লাবের অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি।
আজ শুরু হয়েছে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মর্যাদার টুর্নামেন্ট ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের এবারের আসর। দেশের হোম অব ক্রিকেট মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেড এবং প্রথম বিভাগ থেকে উন্নীত হয়ে প্রিমিয়ারে আসা পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব।
টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নবাগত পারটেক্সের দুই পেসার রনি হোসেন ও জয়নুল ইসলামের তোপে শুরুতে কাঁপছিল আবাহনী। ইনিংসের ২২ ওভারের মধ্যে মাত্র ৬৭ রানে সাজঘরে ফিরেছিলেন পাঁচ তারকা ব্যাটসম্যান। বিশেষ করে জয়নুলের বোলিংয়ের কোনো জবাবই ছিলো না নাঈম, আফিফ, শান্তদের কাছে।
সেখান থেকে আবাহনীর গতবারের অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে নিরাপদ সংগ্রহ এনে দিয়েছেন মুশফিক। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরিতে মুশফিক করেছেন ১২৭ রান। চাপের মুখে ১২৪ বলের এই ইনিংসে ১১ চারের সঙ্গে হাঁকিয়েছেন ৪টি ছয়।
এছাড়া সৈকত খেলেছেন ৭৪ বলে ৬১ রানের ইনিংস। আর শেষদিকে ঝড়ো ক্যামিও খেলেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মাত্র ১৫ বলে করেছেন ৩৯ রান। তাদের ব্যাটে চড়েই নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৯ রানের বড়সড় সংগ্রহ পেয়েছে আবাহনী।
প্রথমবারের মতো আবাহনীতে খেলতে এসে, নিজের প্রথম ম্যাচে টস জিতেছেন মুশফিকুর রহীম। উড়ন্ত ফর্মে থাকা লিটন-নাঈমদের ব্যাটের আগুন দেখার জন্য আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তই নেন আবাহনী অধিনায়ক। কিন্তু দলকে হতাশ করেছেন লিটন-নাঈম দুজনই।
নবাগত পারটেক্সের পেসার রনি হোসেনের প্রথম ওভারের একদম শেষ বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন লিটন। ঠিক তার পরের ডেলিভারি অর্থাৎ দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে নাঈম আউট হয়েছেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। দুজনের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি।
ইনিংসের প্রথম ওভার করতে আসা রনি লাইন-লেন্থ ঠিক করতে ভুগছিলেন বেশ সমস্যায়। প্রথম ওভারেই ওয়াইড থেকে খরচ করেন ৬ রান। তার ওভারের শেষ বলটি বেশ নিচু হয়ে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই ভেঙে যায় লিটনের স্ট্যাম্প।
নাঈম অবশ্য নিজের দোষেই আউট হয়েছেন। জয়নুল ইসলামের বিপক্ষে মুখোমুখি প্রথম বলেই অফস্টাম্পের বাইরের শর্ট ডেলিভারিতে সজোরে হাঁকিয়েছিলেন নাঈম। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে সেটি চলে যায় উইকেটের পেছনে। নিরাপদে তা গ্লাভসবন্দী করেন একসময় জাতীয় দলে খেলা উইকেটরক্ষক ধীমান ঘোষ।
পরে আলো ছড়াতে পারেননি তিন তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব এবং আফিফ হোসেন ধ্রুবরাও। রয়েসয়ে শুরু করা শান্ত ফিরে যান ৩২ বলে ১৪ রানে, বিপ্লব করেন ২৬ বলে ১৪ রান আর আফিফ আউট হন ৯ বলে ৩ রান করে।
তরুণ প্রতিভাদের সুযোগ করে দিতে ব্যাটিং অর্ডারে সাত নম্বরে নামতে হয় প্রিমিয়ারের পরীক্ষিত পারফরমার মোসাদ্দেক সৈকতকে। আর অপরপ্রান্তে ছিলেন অভিজ্ঞ সেনানী মুশফিকুর রহীম। দুজন মিলে নবাগত পারটেক্সকে পাল্টা জবাব দিতে কোনো ভুল করেননি।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মুশফিক ও সৈকত যোগ করেন ১৬০ রান। মুশফিক তুলে নেন সেঞ্চুরি আর সৈকত করেন ফিফটি। মিডিয়াম পেসার রনি হোসেনের বলে ৯৫ থেকে স্কয়ার কাটে পয়েন্ট অঞ্চলে চার মেরে নিজের সংগ্রহটা ৯৯ রানে নিয়ে যান মুশফিক। সেখান থেকে এক্সট্রা কভারে মেরে ফিল্ডারের ভুলে পেয়ে যান আরেক চার, পৌঁছে যান ১০৩ রানে।
সেঞ্চুরি করতে ১১১ বল খেলেন মুশফিক, হাঁকান ৮ চারের সঙ্গে ৩ ছক্কা। তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পর আগ্রাসী হতে শুরু করেন তিনি। পরের ১৩ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে করেন আরও ২৪ রান। সেঞ্চুরিয়ান মুশফিককে ফেরান পারটেক্সের দিনের সেরা বোলার জয়নুল।
পরের ওভারেই সাজঘরে ফেরেন মোসাদ্দেকও। আউট হওয়ার আগে ৭৪ বলে ৪ চার ও ২ ছয়ের মারে করেছেন ৬১ রান। দলের সংগ্রহ তখন ৪৫.২ ওভারে ৭ উইকেটে ২৩২ রান।
সেখান থেকে শেষের ২৮ বলে ৫৭ রান যোগ করেন তাইজুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ঝড় বইয়ে দেন সাইফ। পাঁচটি বিশাল ছক্কার মারে খেলেন ১৫ বলে ৩৯ রানের টর্ণেডো ইনিংস। তাইজুলের ব্যাট থেকে আসে ১৪ বলে ১৭ রান।
মুশফিক-সৈকত-সাইফদের তান্ডবের মাঝেও বোলিংয়ে দুর্দান্ত ছিলেন মাত্র দ্বিতীয় লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলতে নামা জয়নুল ইসলাম। দশ ওভারে করেছেন ৫টি মেইডেন। সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকসহ নিয়েছেন ৩টি উইকেট। একপর্যায়ে তার বোলিং ফিগার ছিলো ৬-৪-৫-২!